নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুর, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫:
রবিবার দুর্গাপুরের চণ্ডীদাস মার্কেটে সিআইটিইউ (CITU)-এর ডাকে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় যোগ দিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্র—উভয় সরকারকেই তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং মেহনতি মানুষের ঐক্যের পক্ষে সওয়াল করেন।
দুর্নীতি ও ইডি-সিবিআই নাটক
রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে ১০০ দিনের কাজের টাকা চুরির প্রসঙ্গ তুলে সেলিম বলেন, "নবান্ন এখন দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু এই নবান্নকে শায়েস্তা করতে মোদীর ৫৬ ইঞ্চির ছাতি লাগে না, লাল ঝান্ডাই যথেষ্ট।" তিনি অভিযোগ করেন, ইডি-সিবিআই তদন্ত আসলে একটি 'সাজানো নাটক'। তাঁর কথায়, "চোর ধরো জেল ভরোর স্লোগান আমরা দিয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশ ও কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলো চোরদের পাহারা দিচ্ছে। আর সেই চোরেরা দল বদলে বিজেপিতে গেলেই সাধু হয়ে যাচ্ছে।"
ভোটার তালিকায় কারচুপি
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন সেলিম। তিনি বলেন, "ভোট লুট শুরু হয় ভোটার লিস্ট থেকে। মৃত মানুষের নাম ভোটার লিস্টে রেখে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাঙ্কে মৃত মানুষের নামে টাকা রাখা অপরাধ হলে, নির্বাচন কমিশন কেন মৃতদের নামে ভোটার স্লিপ ছাপিয়ে অপরাধ করবে না?"
তৃণমূল-বিজেপি আঁতাত ও ধর্মীয় মেরুকরণ
মহম্মদ সেলিম অভিযোগ করেন যে, বিজেপি ও তৃণমূল একে অপরের পরিপূরক। তিনি বলেন, "দিল্লি ও রাজ্যে দুই ফুল মিলে লুটের রাজত্ব চালাচ্ছে। এরা হিন্দু-মুসলমান করে মানুষকে ভাগ করতে চায়। মন্দিরে-মসজিদে লড়াই লাগিয়ে এরা রুটি-রুজি, কাজ ও শিক্ষার প্রশ্নগুলোকে ধামাচাপা দিতে চাইছে।" তাঁর স্পষ্ট বার্তা, "মন্দির বা মসজিদ মানুষের পেট ভরায় না, কারখানা ও কাজই মানুষের জীবন বাঁচায়।"
শিল্প ও ঐক্যের ডাক
শিল্পশহর দুর্গাপুরের রুগ্ন দশা এবং একের পর এক কারখানা বন্ধ হওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এই বাম নেতা। তিনি বলেন, "দুর্গাপুরকে বাঁচাতে হলে, এই জেলার শিল্পকে বাঁচাতে হলে শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র-যুব ও সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে লাল ঝান্ডার তলায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।" তিনি আরও বলেন, বিভাজনের রাজনীতি রুখে দিয়ে কাজের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নামতে হবে।
এদিনের সভায় ঐশী ঘোষ সহ অন্যান্য বাম নেতৃত্বও উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁরাও রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কড়া সমালোচনা করেন।





