লস অ্যাঞ্জেলেস: হলিউড মানেই কি শুধু গ্ল্যামার, লাল গালিচা আর জৌলুস? না। রূপালি পর্দার পেছনের কারিগরদের জীবনে আজ নেমে এসেছে ঘোর অমানিশা। স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা আজ নিজেরাই দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি। ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি (WBD)-কে কিনে নেওয়ার জন্য শুরু হয়েছে এক বিশাল টাকার খেলা, আর এই খবরটিই এখন হলিউডের হাজার হাজার শ্রমিকের বুকে কাঁপন ধরিয়েছে।
নেটফ্লিক্স এবং প্যারামাউন্ট—দুই কর্পোরেট দৈত্য আজ মুখোমুখি। উদ্দেশ্য একটাই—ওয়ার্নার ব্রাদার্সকে গিলে খাওয়া। প্রায় ৭২ থেকে ৮৩ বিলিয়ন ডলারের এই বিশাল অঙ্ক আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দিতে পারে, কিন্তু এই টাকার পাহাড়ের নিচে চাপা পড়তে চলেছে সাধারণ মানুষের রুটি-রুজি। লেখক, অভিনেতা, পরিচালক, ক্যামেরার পেছনের কর্মী থেকে শুরু করে থিয়েটার কর্মী—সবার চোখে আজ শুধুই আতঙ্ক।
ইউনিয়নগুলোর হাহাকার শোনা যাচ্ছে চারদিকে। রাইটার্স গিল্ড, স্যাগ-আফট্রা (SAG-AFTRA) এবং টিমস্টার্সের মতো সংগঠনগুলো হুঁশিয়ারি দিয়েছে—এই সংযুক্তি বা ‘মেগা-মার্জার’ সাধারণ কর্মীদের জন্য এক মরণফাঁদ। তারা বলছে, যদি নেটফ্লিক্স বা প্যারামাউন্ট এই মালিকানা পায়, তবে নির্মমভাবে ছাঁটাই হবে কর্মী, কমবে বেতন, আর কেড়ে নেওয়া হবে দরকষাকষির সামান্য অধিকারটুকুও।
মাত্র ২০২৩ সালেই হাড়ভাঙ্গা খাটুনি আর ধর্মঘটের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার কিছুটা আদায় করেছিলেন এই শিল্পীরা। সেই ঘাম এখনো শুকায়নি, তার আগেই আবার এক নতুন যুদ্ধের ডাক। সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন একে আখ্যা দিয়েছেন এক "মিডিয়া দানব" হিসেবে। ভাবুন তো, পুরো স্ট্রিমিং জগতের অর্ধেকটাই যদি মাত্র একটি কোম্পানির দখলে চলে যায়, তবে কী হবে? বৈচিত্র্য হারাবে শিল্প, কমবে নতুন গল্প বলার সুযোগ। সৃজনশীলতার জায়গা দখল করে নেবে একচেটিয়া কর্পোরেট মুনাফা।
শ্রমিক নেতারা একে বলছেন "একচেটিয়া আধিপত্যের লড়াই" (Monopoly Battle)। তাদের ভয়, বড় বড় টেক-জায়ান্টরা ঐতিহ্যবাহী স্টুডিওগুলোকে গ্রাস করে ফেললে বিশ্ব বিনোদনের চাবিকাঠি চলে যাবে গুটিকয়েক মানুষের হাতে। তখন আর শিল্প থাকবে না, থাকবে শুধু 'কন্টেন্ট'।
হলিউডের এই লড়াই আজ আর কেবল ব্যবসার পাতায় সীমাবদ্ধ নেই। এটি আজ পরিণত হয়েছে লাখো মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে। তাদের একটাই দাবি—"ভালো চাকরি" আর "শিল্পের স্বাধীনতা" রক্ষায় এই চুক্তি রুখতেই হবে। কর্পোরেট হাঙরদের মুখে নিজেদের স্বপ্নকে তুলে না দেওয়ার পণ করে আজ উত্তাল হলিউড।


