সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা। সংসদের মকর দ্বারের সামনে তখন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া (INDIA) জোটের সাংসদদের গগনবিদারী স্লোগান—"ভোট চোর, গদি ছাড়ো!"। তাঁদের অভিযোগ স্পষ্ট, ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে SIR-এর নামে ভোটার তালিকা থেকে বেছে বেছে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। বিরোধীদের দাবি, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রান্তিক ও গরিব মানুষকে নিঃশব্দে গণতন্ত্র থেকে নির্বাসিত করার ছক কষেছে সরকার।
মানবিকতার প্রশ্ন ও বিএলও-দের কান্না
এই আন্দোলন কেবল রাজনীতির গণ্ডিতে আটকে থাকেনি, ছুঁয়ে গেছে মানবিকতার চরম সীমাও। লোকসভায় কংগ্রেস সাংসদ মানিকম টেগোর তুলে ধরলেন এক মর্মান্তিক সত্য। তিনি দাবি করেন, SIR প্রক্রিয়ার অমানুষিক চাপে প্রাণ হারাচ্ছেন বা আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO)। অশ্রুসজল আর্জি জানিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন—কার স্বার্থে এই বলিদান? মৃত কর্মীদের পরিবারের হাহাকার কি সরকারের কানে পৌঁছাবে না? অবিলম্বে এই প্রাণঘাতী প্রক্রিয়া স্থগিত রেখে তদন্তের দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস।
সংসদ যেন রণক্ষেত্র
ভেতরে-বাইরে প্রতিবাদের ঝড়ে বারবার মুলতবি হয়ে যায় সংসদের কাজ। লোকসভার ওয়েলে নেমে এসে বিক্ষোভ দেখান বিরোধীরা, রাজ্যসভা থেকেও ওয়াকআউট করা হয়। যদিও এই মহাজোটের ঐক্যের সুরে সামান্য ছন্দপতনও লক্ষ্য করা গেছে, যখন তৃণমূল কংগ্রেসের মতো শরিকরা কৌশল নির্ধারণী বৈঠকে অনুপস্থিত থাকে। তবুও, প্রতিবাদের আগুনের আঁচ তাতে বিন্দুমাত্র কমেনি।
সরকারের জবাব ও বিরোধীদের ক্ষোভ
অন্যদিকে, সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু শান্ত গলায় জানালেন, সরকার নির্বাচনী সংস্কার বা SIR নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের এই স্বাধীন কাজে সরকার সময়সীমা বাঁধতে পারে না। মন্ত্রীর এই যুক্তিকে "দাম্ভিকতা" বলে উড়িয়ে দিয়েছে বিরোধী শিবির। তাদের পাল্টা প্রশ্ন—যেখানে ২৪০ জন নির্বাচিত সাংসদ বিতর্ক চাইছেন, সেখানে 'স্বাধীন প্রক্রিয়া'র দোহাই দিয়ে সরকার কি পিঠ বাঁচাতে চাইছে?
সব মিলিয়ে, সংসদের অলিন্দ এখন কাঁপছে একটাই দাবিতে—বন্ধ হোক এই তড়িঘড়ি চাপিয়ে দেওয়া SIR, ফিরিয়ে দেওয়া হোক মানুষের ভোটাধিকার। গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরীরা কি পারবেন তথাকথিত এই 'ভোট চুরির' ছক বানচাল করতে? নাকি হারিয়ে যাবে অজস্র মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার? উত্তর দেবে সময়।