" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory "জনগণের খুশির সন্ধানে": লাল পতাকার নিচে এক আবেগঘন পুনর্মিলন ও শপথ //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

"জনগণের খুশির সন্ধানে": লাল পতাকার নিচে এক আবেগঘন পুনর্মিলন ও শপথ



মন্তেভিদিও, উরুগুয়ে – বাতাসের উত্তাপ আর হাজারো মানুষের স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠল ক্লাব আতেনাস। তবে এই উত্তাপ কেবল আবহাওয়ার নয়, এটি ছিল হৃদয়ের। উরুগুয়ের কমিউনিস্ট পার্টি (PCU)-এর ৩৩তম কংগ্রেসের উদ্বোধনী সন্ধ্যাটি কেবল একটি রাজনৈতিক সমাবেশ ছিল না; এটি ছিল প্রজন্মের পর প্রজন্মের এক মেলবন্ধন, চোখের জল, গান এবং আগামীর স্বপ্নের এক আবেগঘন ক্যানভাস।

গত ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫-এর সন্ধ্যায় পালের্মোর এই ঐতিহাসিক ভেন্যুটি যেন এক বিশাল লাল সমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। মঞ্চের পেছনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল— "সর্বজনীন সুখের জন্য একটি পথ" (Un camino para la pública felicidad)। এই একটি বাক্যই যেন উপস্থিত হাজারো মানুষের হৃদয়ের কথা বলে দিচ্ছিল।



তারুণ্যের চোখে স্বপ্নের ঝিলিক


অনুষ্ঠানের অন্যতম আবেগপ্রবণ মুহূর্ত ছিল যখন ইউনিয়ন অফ কমিউনিস্ট ইয়ুথ (UJC)-এর ৭০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়। সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক নাতালিয়া দিয়াজ যখন মঞ্চে আসেন, তখন পুরো হলজুড়ে ছিল পিনপতন নীরবতা, যা পরে করতালিতে ফেটে পড়ে।

নাতালিয়া কেবল রাজনীতির কথা বলেননি, তিনি বলেছেন আজকের তরুণ প্রজন্মের যন্ত্রণার কথা। তিনি বলেন, "আমাদের প্রজন্ম অনিশ্চয়তায় ভরা। আমরা মানসিক অবসাদ আর সফল হওয়ার তীব্র চাপে পিষ্ট। কিন্তু আমরা হার মানিনি। আমরা বিপ্লবকে বেছে নিয়েছি কারণ আমরা জীবনকে বদলাতে চাই।" 

তার কণ্ঠস্বর যখন কেঁপে উঠছিল, তখন দর্শকসারিতে বসা প্রবীণ কমরেডদের চোখে দেখা গেছে গর্বের অশ্রু। যেন তারা তাদের ফেলে আসা যৌবনের প্রতিচ্ছবি দেখছিলেন নাতালিয়ার মাঝে।



লড়াইয়ের গান ও কান্নার সুর


রাজনীতির মঞ্চে যখন গান বেজে ওঠে, তখন তা আর কেবল সুর থাকে না, তা হয়ে ওঠে প্রতিবাদের ভাষা। শিল্পী মেচি মুনিজ এবং দিয়েগো ভাসকুয়েজ যখন গিটার হাতে গাইলেন, "আমার দেশে কী বিষণ্নতা..." (En mi país qué tristeza), তখন উপস্থিত অনেকেই আবেগ ধরে রাখতে পারেননি । গানের প্রতিটি শব্দ যেন উরুগুয়ের ইতিহাসের কঠিন দিনগুলো, একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই এবং হার না মানা মানুষের গল্প বলছিল।


সীমানা ছাড়িয়ে মানবতার কান্না


উরুগুয়ের সীমানা ছাড়িয়ে এই কংগ্রেস হয়ে উঠেছিল বিশ্বমঞ্চের বেদনার অংশীদার। যখন ফিলিস্তিনের গাজায় চলা গণহত্যার কথা স্মরণ করা হলো, তখন পুরো মিলনায়তনে নেমে আসে শোকের ছায়া। ফিলিস্তিনি দূতাবাসের পাঠানো বার্তায় যখন বলা হলো, "আপনাদের এই সমর্থন আমাদের বাঁচার শক্তি জোগায়," তখন সংহতির এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা যায় ।

পার্টির সাধারণ সম্পাদক হুয়ান কাস্তিলো তার ভাষণে কিউবার ওপর মার্কিন অবরোধ এবং ভেনেজুয়েলার প্রতি হুমকির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "কিউবা একা নয়, আমরা সবাই তাদের সাথে আছি।" তার কণ্ঠে ছিল ভাই হারানোর বেদনা আর সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দৃপ্ত শপথ।



একতা ও আগামীর পথ


ফ্রেন্ত আম্পলিও (Frente Amplio)-এর সভাপতি ফেরনান্দো পেরেইরা যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, "বামপন্থীরা একা সরকার চালাতে পারে না, আমাদের সবাইকে প্রয়োজন," তখন তা এক পারিবারিক আহ্বানের মতো শোনাল। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, এই লড়াই কেবল ক্ষমতার নয়, এই লড়াই সেইসব শিশুদের জন্য যারা দারিদ্র্যের মধ্যে জন্মায়, সেইসব শ্রমিকদের জন্য যারা ন্যায্য অধিকার চায় ।

কংগ্রেসের এই সন্ধ্যা প্রমাণ করে দিল যে, রাজনীতি কেবল তর্ক-বিতর্ক নয়, এটি মানুষের ভালোবাসারও গল্প। ১০৫ বছরের পুরনো এই পার্টির প্রবীণ সদস্যরা যখন নবীনদের কাঁধে হাত রাখেন, তখন সেই স্পর্শে থাকে ইতিহাসের দায়বদ্ধতা। "সর্বজনীন সুখ" বা "পাবলিক হ্যাপিনেস"—এই শব্দবন্ধটি কেবল একটি স্লোগান নয়, এটি ছিল সেই রাতে উপস্থিত প্রতিটি মানুষের বুকের গহীনে লালিত এক পবিত্র স্বপ্ন।

ক্লাব আতেনাসের আলো নিভে গেলেও, হাজারো মানুষের বুকে জ্বলে ওঠা আশার মশালটি মন্তেভিদিওর রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ল।


Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies