অশোকনগর-কল্যাণগড়ের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে মাটি খুঁড়তে গিয়ে কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবার শুরু হলো তুমুল রাজনৈতিক চাপানউতোর। উদ্ধার হওয়া হাড়গোড় ঘিরে যখন পুলিশ ও ফরেনসিক দল তদন্ত চালাচ্ছে, ঠিক তখনই স্থানীয় বিধায়কের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন স্থানীয় সিপিআইএম নেতৃত্ব। ঘটনার সূত্রপাত গত কাল দুপুরে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একটি স্থানে মাটি খোঁড়ার সময় মানুষের হাড়গোড় ও কঙ্কালের অংশবিশেষ উদ্ধার হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
ভিড় জমে গেলেও স্থানীয় প্রবীণ নাগরিকদের মতে, বিষয়টি খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। তাঁদের দাবি, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের আগে এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলটি মূলত কবরস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ফলে মাটি খুঁড়লে পুরনো হাড়গোড় পাওয়া নতুন কিছু নয়। তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন স্থানীয় বিধায়ক এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিপিআইএম নেতাদের দিকে আঙুল তোলেন। বিধায়ক দাবি করেন, উদ্ধার হওয়া কঙ্কালটি স্থানীয় সিপিআইএম নেতা বিজন মুখার্জির 'বেডরুমের' মেঝের নিচ থেকে পাওয়া গেছে। বিধায়কের এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে কড়া ভাষায় বিবৃতি দিয়েছেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআইএম নেতা জয় দাস। তিনি বিধায়কের মন্তব্যকে 'সস্তা রাজনীতি' ও 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' বলে উল্লেখ করেন। জয় দাস বলেন, "বিধায়ক অশোকনগর-কল্যাণগড়ের ইতিহাস জানেন না। তিনি যে চিত্রনাট্য লিখেছেন তা বড্ড কাঁচা। তিনি দাবি করেছেন কঙ্কালটি বিজন মুখার্জির বেডরুমের নিচ থেকে পাওয়া, অথচ বিজন বাবুর কোনো আলাদা বেডরুমই ছিল না। টালির চালের নিচে, বারান্দা সম্বলিত অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করতেন তিনি।
তাঁর তিন কন্যাকে নিয়ে কোনোক্রমে সংসার চালাতেন। তখন রাজনীতিতে আজকের মতো সোনার চেইন বা গয়না পরার সংস্কৃতি ছিল না।" জয় দাস আরও অভিযোগ করেন, পুলিশি তদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্ট আসার আগেই বিধায়ক মনগড়া কথা বলে এলাকা ও ওয়ার্ডের নাগরিকদের অপমান করেছেন। তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, "বেশি দুধ চা খেলে গ্যাস মাথায় উঠে যায়, হয়তো সেই কারণেই বিধায়ক ভুলভাল বকছেন। অশোকনগরের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে তিনি বেমানান।" সিপিআইএম নেতৃত্বের স্পষ্ট দাবি, পুলিশ দ্রুত পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করুক। কিন্তু তদন্তের আগেই বিধায়ক যে মন্তব্য করেছেন, তা যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তবে তাঁকে অশোকনগরবাসীর কাছে করজোড়ে ক্ষমা চাইতে হবে। আপাতত কঙ্কাল উদ্ধারের বৈজ্ঞানিক তদন্তের রিপোর্টের দিকেই তাকিয়ে আছে স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ।


